আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি কী
আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি কী
ভূমিকা
বাংলাদেশে যেন ভবিষ্যতে আর কোন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার হতে না পারে, সেজন্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করার কোন বিকল্প নেই। কারণ বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতিই এমনভাবে তৈরী, যেখানে একজন প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাচার হওয়ার সকল ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তা ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। এই নির্বাচন ব্যবস্থায় মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নয়, বরং সংখ্যালঘুর মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। বর্তমান বিশ্বে মাত্র ৫০টিরও কম দেশে ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি চালু আছে; অন্যদিকে পৃথিবীর ৯১ টি দেশে আনুপাতিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে যদি, আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আর কোন দল জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি আনুপাতিক নির্বাচন চায় না।
ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি
বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রায় ৭ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে দুইটি নির্বাচন ব্যবস্থার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। একটি হল First Past the Post এবং আরেকটি Proportional Representation। বাংলাদেশের যে ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে সেটি মূলত First Past the Post পদ্ধতি। একে ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যবস্থাও বলা হয়। ওয়েস্টমিনিস্টার কথাটি এসেছে লন্ডনের প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে। এখানেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অবস্থিত। মূলত, ব্রিটেনের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ওয়েস্টমিনিস্টার সিস্টেম বলা হয়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে; অর্থাৎ অতীতে যে সমস্ত দেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল, সেই সব দেশে ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যবস্থার নির্বাচন দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনী এলাকা বা আসনে একাধিক দলের মনোনিত প্রার্থী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে। একটি আসনে যে ব্যক্তি বেশি ভোট পায়, তিনি ওই আসনে নির্বাচিত হন। এভাবে সারা দেশে যে দল সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করে, সেই দল সরকার গঠন করে।
আনুপাতিক নির্বাচন
Proportional Representation বা আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে, কোন নির্বাচনী এলাকা বা আসনে প্রার্থীদের মধ্যে কোন ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দীতা হয় না। কারণ, আসনভিত্তিক কোনো প্রার্থীই থাকে না। এমনকি ব্যালটে কোন প্রার্থীর নামও থাকে না। এই পদ্ধতিেত শুধুমাত্র দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। একটি দল সারা দেশে যত শতাংশ ভোট পায়, সেই অনুযায়ী জাতীয় সংসদের আসন বন্টন হয়। মনে করুন, সারা দেশের নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী ‘ক’ দল পেয়েছে ৬০ শতাংশ ভোট, ‘খ’ লীগ ৩০ শতাংশ ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে যেহেতু আসন সংখ্যা ৩০০টি, তাহলে ভোটের আনুপাতিক হারে ‘ক’ দল পাবে ১৮০ টি আসন, ‘খ’ লীগ পাবে ৯০ টি আসন এবং ‘গ’ পার্টি পাবে ৩০টি আসন। সেক্ষেত্রে ‘ক’ দল সরকার গঠন করবে এবং ‘খ’ লীগ ও ‘গ’ পার্টি হবে বিরোধী দল।
তারমানে সারা দেশে ভোটের ফলাফলের আনুপাতিক হারে, পার্লামেন্টের আসন বন্টনের পদ্ধতিকেই Proportional Representation বা আনুপাতিক নির্বাচন বলা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন আনুপাতিক পদ্ধতিতেই বন্টন করা হয়।
আনুপাতিক নির্বাচন আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে। ১. মুক্ত তালিকা ২. বদ্ধ তালিকা এবং ৩. মিশ্র পদ্ধতি। মুক্ত তালিকায় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলগুলো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর, দলের প্রার্থী তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নামের ক্রমানুসারে আসন বন্টন করা হয়।
বদ্ধ পদ্ধতিতে প্রার্থী তালিকাই প্রকাশ করা হয় না। আর মিশ্র পদ্ধতিতে কিছু আসনে আনুপাতিক ও কিছু আসনে ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়। আবার কোনো কোনো দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকায়; এক কক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন এবং অন্য কক্ষে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়।
সুবিধা-অসুবিধা
বাংলাদেশের প্রচলিত ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে একটি দল সারা দেশে কত ভোট পেল সেটি দেখা হয় না। কোন দল কত আসন পেল সেটিই মূখ্য বিষয়। মনে করুন; বর্তমানের প্রচলিত ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির নির্বাচনে ‘ক’দল সারা দেশে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও অধিক আসন লাভ করেছে। এবং ‘খ’ লীগ ও ‘গ’ পার্টি সম্মিলিতভাবে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েও কম আসন লাভ করেছে। সেক্ষেত্রে কম ভোট পেয়েও ‘ক’দল সরকার গঠন করবে। এবং ‘খ’ লীগ ও ‘গ’ পার্টি একসাথে দেশের অধিক ভোট পেয়েও হয়ত, সংসদেই যেতে পারবে না। সেক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ লোকের ভোটের কোন মূল্যই থাকল না। কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতিতে যে দল যত ভোট পাবে তারা তত শতাংশ আসনে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এক্ষেত্রে দেশের মানুষের ভোটের রায় বৃথা যাবে না।
প্রচলিত ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে আসন ভিত্তিক নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতামতের প্রতিফলন হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়; মনে করুন একটি আসনে ‘ক’ দল প্রার্থী পেয়েছে ৩৫ টি ভোট, ‘খ’ লীগ প্রার্থী পেয়েছে ৪০টি ভোট এবং ‘গ’ পার্টি পেয়েছে ২৫ টি ভোট। তারমানে এখানে ‘খ’ লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছে। কারণ সে বেশি ভোট পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এই আসনে মাত্র ৪০ জন লোক তার পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু অন্যান্য দলের ভোট মিলিয়ে ৬০ জন লোক তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষের ভোটে পিছিয়ে থাকা সত্তেও বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হওয়া যায়।
কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সরকার গঠিত হয়। এবং সেই সাথে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করার সুযোগ থাকে।
তাছাড়া বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় কোন আসনে প্রতিদ্বন্দী না থাকলে, ভোট ছাড়াই একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ভোট বর্জন করেছিল; তখন ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। কিন্তু আনুপাতিক পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার কোন সুযোগই নেই।
বিএনপি কেন চায় না
বাংলাদেশে প্রচলিত ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির নির্বাচনের চেয়ে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা সকল দিক থেকেই সুবিধাজনক। এবং এই উপায়েই সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক উপায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা যায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি এই পদ্ধতি চায় না। তারা বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচনের পক্ষে।
জনগণের ভোটের এত সুন্দর প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ থাকার পরও বিএনপি এর বিপক্ষে কেন? এর কারণ হিসেবে বিএনপি বিস্তরিত কিছু জানায়নি, তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন যে, দেশের নির্বাচন একটি সংস্কৃতির ব্যাপার; দেশের প্রথম থেকে এই পদ্ধতির নির্বাচন হচ্ছে, তাই তারা ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতেই থাকার পক্ষে।
সত্যিকার অর্থে এটি অত্যন্ত খোড়া যুক্তি। বাংলাদেশের প্রথম থেকে তো নির্বাচনে ভোট চুরিরও সংস্কৃতি রয়েছে। তাহলে কি আমরা সেই ভোট চুরির সংস্কৃতিও টিকিয়ে রাখব? বাংলাদেশে মাত্র ৫০ বছর ধরে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে; কিন্তু যে ব্রিটেনে এই পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে, এবং মধ্যযুগ থেকে কয়েকশ বছর ধরে সেখানে ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির নির্বাচন চলে আসলেও, খোদ যুক্তরাজ্যেই এই পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনেই ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে জনগণের ভোটের প্রকৃত ফলাফল উঠে আসছে না বলে, দেশটিতে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করার বিষয়ে বিতর্ক চলছে। তারমানে যারা এই পদ্ধতির আবিষ্কারক তারাই যদি এর সংস্কৃতির ধার না ধেরে, নতুন কার্যকর পদ্ধতির দিকে যেতে চাইতে পারে, সেখানে আমরা কেন সংস্কৃতির দোহায় িদয়ে অকার্যকর একটি পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে থাকব।
আসল কথা হল, বিএনপি আর আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক চরিত্রগত কোন পার্থক্যই নেই। বিএনপিও চায় এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে, আওয়ামীলীগের মত চীরস্থায়ীভাবে ক্ষমতা কুক্ষীগত করতে। ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি চালু থাকলে বিএনপি হয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে। কিন্তু আনুপাতিক নির্বাচন হলে, তারা কখনই সংসদে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সেকারণেই বিএনপি নতুন কার্যকরী এই ব্যবস্থা চায় না।
৯০ এর দশকের শুরুতে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দিতে চায়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কে অসাংবিধানিক ও অবাস্তব বলে ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স-সীমা বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, তৎকালীন বিএনপিপন্থী প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান অবসরের পরপরই যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। নিজেদের স্বার্থে বিএনপি সংবিধানে সেই সংশোধনী আনার কারণেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এতটা বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে, তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়। যে বিএনপি একসময় বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক, তারাই আবার এমন দৃঢ় অবস্থানে পৌছায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনেই যাবে না। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কারসাজি করা শুরুই করেছিল বিএনপি।
সত্যিকার অর্থে আওয়ামীলীগ হোক বা বিএনপি, সকল রাজনৈতিক দলের একটাই লক্ষ্য, তা হল যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু ক্ষমতায় গেলে হবে না, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আর সেকারনেই বিএনপি আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন চায় না। কারণ সেক্ষেত্রে তারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না।
কিভাবে দেশের নাগরিকরা সুশাসন লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে আসলে কোন রাজনৈতিক দলেরই মাথা ব্যথা নেই। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও আবার নতুন পদ্ধতির প্রতি এত আগ্রহী হবার কারণ হল, আনুপাতিক নির্বাচন হলে, তারাও সংসদের দু একটি আসন পেতে পারে। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে তাদের সংসদের যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
বাংলাদেশের ভোটারা এমনিতেই প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রতীক দেখেই বেশি ভোট দেয়। সেক্ষেত্রে আনুপাতিক নির্বাচন হলে দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতেও কোন পরিবর্তন হবে না। সেই সাথে জাতীয় নির্বাচন কে কেন্দ্র করে কালোটাকার ব্যবহার, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব বিস্তার এবং ক্ষমতাশালী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কারচুপির মত অনেক ধরনের দুর্নীতি কমে আসবে। তাই, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে, আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। তবে বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।।