প্রায় দেড়শ বছর ধরে আমেরিকার সাম্য আর মুক্তির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টি। আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর উপলক্ষে, ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে ভাষ্কর্যটি আমেরিকার জনগণকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
কিকেনকিভাবে র এই পর্বে জানব আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত স্ট্যাচু আব লিবার্টি সম্পর্কে।
রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে, সবুজ রঙের ঢিলে ঢালা গাউন পরা এক নারীর অবয়ব স্ট্যাচু অব লিবাটি। ভাষ্কর্যটির বাইরের অবয়ব নকশা করেন ফরাসি স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি এবং এর ভেতরের নকশা করেন, আরেক বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি গুস্তাভ আইফেল, তিনি আইফেল টাওয়ারের নকশাকারী হিসেবে বিখ্যাত। অতীতে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ১০০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে, ১৮৮৬ সালে ফ্রান্স ভাষ্কর্যটি আমেরিকাকে উপহার দেয়। আমেরিকার নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের মুখে লিবার্টি দ্বীপে স্টাচু অব লিবার্টি কে স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাষ্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাত। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লক্ষ লোক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে আসে।
১৯২৪ সাল পর্যন্ত ভাষ্কর্যটির নাম ছিল, লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্যা ওয়াল্ড, পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ভাষ্কর্যটির ডান হাতে রয়েছে প্রজ্জলিত মশাল এবং বাম হাতে রয়েছে আইনের বই। স্ট্যাচু অব লিবাটির মুকুটে রয়েছে সাতটি কাটা, যা সাত মহাদেশ ও সাত সমুদ্র কে নিদের্শ করে। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূল ভাষ্কর্যটির উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি। তবে মাটি থেকে মূল বেদি সহ এর উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি। মূর্তিটির নাকের র্দৈঘ্য ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং এর এক কান থেকে আরেক কানের দূরত্ব ১০ ফুট। স্ট্যাচু অব লিবার্টিও পায়ে যে জুতা পরানো হয়েছে, তা বাজারে বিক্রি করলে জুতাটির মাপ হত ৮৭৯। তামার তৈরী সমগ্র মূর্তিটির ওজন প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি। এর পায়ের কাছে পরে থাকা শেকল আমেরিকার মুক্তির প্রতীক। স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভেতরে ৩৫৪টি সিড়ির ধাপ অতিক্রম করে মূর্তির মাথায় ওঠা যায়। মূর্তির মুকটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা, যা অনেকটাই ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে কাজ করে।
স্ট্যাচু আব লিবার্টি সম্পূর্ন মূর্তিটিই তৈরী করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহাড় ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে, ৩০০ টি খন্ডে তৈরী হয়েছে মূর্তিটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর, তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ভাষ্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্ট্যাচু আব লিবার্টি প্রথম থেকেই দেখতে সবুজ রঙের ছিল না, এমনকি একে সবুজ রংও করা হয়নি। মূর্তিটি তামার তৈরী হওয়ায়, শুরুতে এর রংও ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে, এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয়বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ায় মূর্তিটি সবুজ রং ধারন করছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।
শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবাটি কে নিউইয়কের হাডসন নদীতে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাষ্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিল মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাষ্কর্য নির্মানের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ভাষ্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়। সুয়েজ খালের পাড়ে মূর্তিটি স্থাপনের আগে এর নামকরণ করা হয়েছিল, ‘ইজিপ্ট ব্রিঙিং লাইট টু এশিয়া’।
ভিডিওটি নিয়ে আলোচনা