ভিডিও শুরু করার আগে অনুরোধ করব, আপনি যদি এই চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে কি কেন কিভাবে সাবস্ক্রাইব করে বেল আইকনটিতে ক্লিক করুন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ে আলোচনা করেন। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে আসার আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। যদিও বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে মাত্র ১০ দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা নদীর ৩১০ থেকে ৪৫০ কিউসেক পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্ত ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত গঙ্গা নদী থেকে ১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে পশ্চিমবঙ্গের ভাগিরথী-হুগলী নদীতে প্রবাহিত করে। বাংলাদেশের সাথে করা ভারতের এ ধরনের অন্যায় জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা করা হলেও, বিষয়টি ভারত খুব একটা পরওয়া করেনি। এরপর ১৯৭৮, ৮২, ৮৫ ও ১৯৯২ সালে স্বল্প মেয়াদী পানি বন্টন চুক্তি হলেও কোনবারই ভারত তার কথা মত কাজ করেনি। এরপর ১৯৯৬ সালে হওয়া ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা চুক্তিতে পানি বণ্টনের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা থাকলেও; তাও ঠিকমত মানছেনা ভারত। প্রতিটি চুক্তির পর ভারত অন্যায়ভাবে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। নদী বা কোন প্রবাহমান জলরাশির পানি পরিমাপের একক হল “পঁনরপ ভববঃ ঢ়বৎ ংবপড়হফ” যাকে সংক্ষেপে বলা হয় কিউসেক। ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী নদীতে ৭০ হাজার কিউসেক পানি থাকলে উভয় দেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক। আর ৭৫ হাজার কিউসেক এর বেশি পানি থাকলে ৪০ হাজার কিউসেক পাবে ভারত, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ। অথচ ভারতের খেয়াল খুশিমত বাঁধ থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পানি অপসারণ ও বন্ধের ফলে; শুষ্ক মৌসুমে তীব্র খরা ও বর্ষা মৌসুমে প্রচন্ড বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। ফারাক্কা বাঁধ কেন্দ্রিক এই স্বেচ্ছাচারিতার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত নিজেও মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের আগে দুই দেশের নদী বিশেষজ্ঞরা এর বিরোধিতা করে বলেন, গঙ্গা বা, পদ্মার মত বিশাল নদীর গতিপথে বাঁধ দিয়ে বিঘিœত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপরও ভারত সরকার গঙ্গায় বাঁধ নির্মাণ এবং হুগলী ও ভাগিরথী নদীতে পানি পৌছানোর জন্য ফিডার খাল খননের কাজ শুরু করে। এই বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। এই অপরিানামদর্মী প্রকল্প বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে। ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশ অংশের পদ্মা পরিণত হয়েছে এক খন্ড মরুভূমিতে। বাঁধের ফলে পদ্মা নাব্যতা হারিয়েছে আড়াই হাজার কিলোমিটার নদীপথ। সেইসাথে ৪৯ টি শাখা নদীর অস্তিত্ত্ব সম্পূর্ন বিলীন হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজ চালুর পর গত চার দশকে গঙ্গা অববাহিকায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। গঙ্গার উজানে বিহার ও উত্তর প্রদেশ এবং ভাটিতে সুন্দরবন পর্যন্ত পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র আজ সুস্পষ্ট। গঙ্গার উজানে বিপুল পরিমাণ পলি জমে প্রতিবছর বন্যা দেখা দিচ্ছে ভারতের বিহারসহ উত্তর প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। অন্যদিকে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি আটকে রাখার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভাটি অঞ্চলের বাংলাদেশ। ফারাক্কা বাঁধের ফলে প্রতিবছর শুধুমাত্র বিহারেই ২০ লক্ষ মানুষ হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশে আসা গঙ্গাবাহিত পলির পরিমাণ দুই বিলিয়ন টন থেকে এক বিলিয়ন টনে নেমে এসেছে। এর ফলে মেঘনা মোহনায় অবস্থিত উপকূলীয় চরাঞ্চলের গঠন প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। এই ধারা চলমান থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমি গঠন এবং ভূমি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। এই বাঁধের কারণে একসময়ের প্রমত্ত পদ্মার এখন মুমূর্ষু আবস্থা। এ অঞ্চলের সবুজ শ্যামল বাংলা হয়ত অচিরেই মরুভূমিতে পরিণত হবে।
শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। আর্থিকমূল্যে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। পদ্মার পানি প্রবাহ মারাত্মভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর অববাহিকায় রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির প্রথম স্তর ৮-১০ ফুট এর জায়গায় ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। মওসুমী বৃষ্টি এই স্তরের পানির অভাব পূরণ করতে পারছে না। পানি প্রবাহের এমন করুণ অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয় মরুকরণ প্রক্রিয়া। শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে মাটির আর্দ্রতা কমে গেছে ৩৫ শতাংশ। আর্দ্রতার অভাবে দিনের নিম্নতম ও উচ্চতম তাপমাত্রার তারতম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের গড়াই নদী এখন এই মরুকরণ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত। প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে গেছে; ফলে বাংলাদেশে প্রায়ই বড়ো মাপের বন্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাছাড়া মিঠা পানির সরবারহ কমে যাওয়ায়, কৃষিক্ষেত্রে এর ভয়াবহ প্রবাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। বাঁধের ফলে খুলনা অঞ্চলের মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির আর্দ্রতা হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও মিঠা পানির অপ্রাপ্যতার জন্য মৎস সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। গঙ্গার অনিয়ন্ত্রিত পানি প্রবাহের কারণে এই এলাকার প্রায় দুইশতাধিক মাছের প্রজাতি ও ১৮ প্রজাতির চিংড়ী হুমকির সম্মুখীন। মাছের সরবরাহ কমে যাবার ফলে, কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ৩২০ কিলোমিটারের বেশি নৌপথ নৌ-চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি ভারতেও ফারাক্কার বিরুদ্ধে জনমত জোরালো হচ্ছে, কারণ ফারাক্কা এখন সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি ঘটাচ্ছে। যে কলকাতা বন্দর টিকিয়ে রাখতে এই বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, বাঁধ নির্মানের ৪৩ বছর পরও কলকাতা বন্দরকে বাঁচানো যায়নি। এমনকি কলকাতা বন্দর সচল রাখতে বর্তমানে যে পরিমাণ ড্রেজিং করতে হয়, ফারাক্কা বাঁধ চালু করার আগেও এতটা ড্রেজিং দরকার হত না। বাঁধ নির্মানের আগে স্থানীয় অধিবাসীদের বলা হয়েছিল, ফারাক্কা চালু হলে আর বন্যা হবে না; কিন্তু অতীতের তুলনায় ভয়াবহ বন্যা দেখা গেছে শুধুমাত্র বাঁধের কারণে। বছর বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থামাতে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ এবং উন্নয়নকর্মীরা বলছেন, বাঁধটি না ভেঙে, এর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখেই বাঁধের গেটগুলো অপসারণ করা সম্ভব। নদীতে এ ধরনের বাঁধের ফলে যদি লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হয়, সেক্ষেত্রে তা তুলে ফেলার একাধিক নজীর ইউরোপ আমেরিকায়ও রয়েছে। তাই বাংলাদেশ ভারত উভয় দেশের জন্য অভিশাপ স্বরূপ এই ফারাক্কা বাঁধ অবিলম্বে সরিয়ে ফেলাই হবে সকলের জন্য মঙ্গলকর।
এ ধরনের ভিডিও নিয়মিত দেখতে চাইলে কি কেন কিভাবে সাবস্ক্রাইব করুন, আমাদের পরবর্তী ভিডিও আপলোড হওয়ার সাথে সাথে দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব বাটনের পাশে বেল আইকনটিতে ক্লিক করুন।
এই ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক করুন, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। কি কেন কিভাবে চ্যানেলে কি কি বিষয়ে ভিডিও দেখতে চান তা কমেন্টে লিখে জানান।
ভিডিওটি নিয়ে আলোচনা