বিগত শতকের সবচেয়ে বড় জাহাজ আরএমএস টাইটানিক। বহুল আলোচিত সেই জাহাজের অদলে নির্মিত হতে যাচ্ছে আরেকটি জাহাজ, যার নাম হবে টাইটানিক ২।
কিকেনকিভাবে র এই পর্বে জানব টাইটানিক ২ জাহাজ সম্পর্কে।
বিংশ শতকের সবচেয়ে বড় মনুষ্য নির্মিত ভাসমান যান টাইটানিক। জাহাজটি তার প্রথম যাত্রাই ডুবে গিয়েছিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে। টাইটানিকের এই করুণ পরিণতির কাহিনী উঠে এসছে বহু বই, নাটক, সিনেমা, প্রমাণ্যচিত্র সহ প্রায় সকল ধরনের প্রচার মাধ্যমে। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে টাইটানিক এর গল্প পৌছে গেছে কিংবদন্তির পর্যায়ে। আর তাই টাইটানিকের চেয়েও অনেক গুণ বড়, বিলাসবহুল ও আধুনিক বহু জাহাজ তৈরী হলেও, টাইটানিকের আবেদনকে পেছনে ফেলতে পারেনি কেউই। টাইটানিকের প্রতি মানুষের এই আবেগ ও ভালোবাসা কে পুঁজি করে এবার ব্যবসায় নামছেন অস্ট্রেলিয় ধনকুবের ক্লিভ পালমার। তার মালিকানাধীন ব্লু স্টার লাইন কোম্পানি তৈরী করতে যাচ্ছে টাইটানিক ২ নামের একটি জাহাজ। জাহাজটি নকশা করা হয়েছে হুবহু টাইটানিকের আদলে। টাইটানিক ২ জাহাজটি ২০২২ সালে তার যাত্রা শুরু করবে।
১৯১২ সালের আসল টাইটানিক ও টাইটানিক ২ দেখতে একই রকম হলেও, তাদের মধ্যে বেশ কিছু মিল ও অমিল রয়েছে। প্রথম টাইটানিক তৈরী করেছিল হোয়াইট স্টার লাইন আর বর্তমানে টাইটানিক ২ তৈরী করছে ব্লু স্টার লাইন। প্রথম টাইটানিক তৈরী হয়েছিল ১৯০০ সালের প্রযুক্তি দিয়ে, আর বর্তমানে টাইটানিক ২ তৈরী হচ্ছে আধুনিক সকল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে। টাইটানিক ২ এর সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হল, এই জাহাজে সকল যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক লাইফবোট রাখা হবে। লাইফ বোট ছাড়াও একুশ শতকের একটি জাহাজে নিরাপত্তার জন্য যা যা থাকা দরকার, তার সবই থাকছে এতে। স্যাটেলাইট ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ডিজিটাল নেভিগেশন ও আধুনিক রাডারের সাহায্যে সবসময় সংযুক্ত থাকবে টাইটানিক ২। এছাড়াও ব্লু স্টার লাইন কর্তৃপক্ষের দাবি, আপদকালীন সময়ে যাত্রীদের অতিদ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলছে তারা।
টাইটানিক ২ এর দৈর্ঘ্য আসল জাহাজের সমান ৮৮৫ ফুট। প্রথম টাইটানিকের প্রস্থ ১৭৫ ফুট হলেও, কিছু বাড়তি সুবিধা যোগ করার কারণে টাইটানিক ২ এর প্রস্থ একটু বেশি হবে। ৯ তলা বিশিষ্ট টাইটানিক ২ এর উচ্চতা প্রায় ১৭৫ ফুট এবং ওজন ৪০ হাজার টন। আসল টাইটানিকে মত টাইটানিক ২য়েও থাকবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির টিকিট ব্যবস্থা। টাইটানিক ২ জাহাজের ৮৪০ টি কেবিনে পরিবহন করতে পারবে ২ হাজার ৪০০ জন যাত্রী। এবং জাহাজ পরিচালনার জন্য নাবিক ও কর্মী থাকবে মোট ৯০০ জন। প্রথম টাইটানিক নির্মান করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের বেলফাস্টে; আর টাইটানিক ২ নির্মান করা হচ্ছে চীনের জিয়াংশু তে। নির্মান শেষ হবার পর টাইটানিক ২ চীন থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বন্দরে যাবে। এরপর সেই প্রথম টাইটানিকের মত সাউদাম্পটন বন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে শুরু হবে টাইটানিক ২ এর যাত্রা।
টাইটানিকের মত হুবহু দেখতে অতীতেও আরেকটি জাহাজ ছিল। টাইটানিকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান হোয়াইট স্টার লাইনের তৈরী একই রকমের আরেকটি জাহাজ হল অলিম্পিক। হোয়াইট স্টার লাইন তাদের পুরনো জাহাজের জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়ে বিরাট এক ধাপ্পাবাজির আশ্রয় নেয়। বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলোচিত বিষয় টাইটানিক ডুবি কি সত্যিই কোন দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ধারণা করা হয় হোয়াইট স্টার লাইন তাদের অলিম্পিক জাহাজকে টাইটানিক নাম দিয়ে, ইচ্ছাকৃতভাবে সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিল। আর তাই টাইটানিক কখনই ডুবে নি, ডুবেছিল অলিম্পিক।
ভিডিওটি নিয়ে আলোচনা